Home » নেভাল একাডেমিতে ২০১৪-বি ব্যাচের কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

নেভাল একাডেমিতে ২০১৪-বি ব্যাচের কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

Author: আইএসপিআর

চট্টগ্রাম ০১ জুন ২০১৬:- চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে আজ বুধবার (০১-০৬-২০১৬) মিডশীপম্যান ২০১৪-বি ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও আকর্ষণীয় মার্চপাষ্টের সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী নবীন কর্মকর্তাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৪-বি ব্যাচের ৪১ জন মিডশীপম্যান কমিশন লাভ করলেন। এদের মধ্যে ০৩ জন প্যালেষ্টাইনী মিডশীপম্যান রয়েছেন।

President parade at BNA (1-6-16) (1) মিডশীপম্যান ২০১৪-বি ব্যাচের মোঃ নাজমুল হোসাইন দুই বছর মেয়াদী কমিশন পূর্ব প্রশিক্ষণে সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশীপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এছাড়া মিডশীপম্যান মোঃ তানজীম রাহাত প্রশিক্ষণে ২য় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ রহুল আমিন স্বর্ণপদক’ এবং মিডশীপম্যান মোঃ সাব্বির হোসেন ৩য় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে নৌবাহিনী প্রধান তাঁর ভাষণে, তরুণ প্রজ›েমর কর্মকর্তাদের দেশ রক্ষার মহান কর্তব্যে আত্মনিয়োগ করে দেশ সেবার কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করেন। এছাড়া তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের কথাও শ্রদ্ধাভরে স¥রণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল কর্মকর্তা ও নাবিকদেরকে একযোগে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা এবং পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নৌবাহিনী আজ একটি ত্রিমাত্রিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে আতœপ্রকাশ করতে চলেছে। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও অসামান্য নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন।

President parade at BNA (1-6-16) (3)নৌবাহিনী প্রধান বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের প্রাধিকার তালিকায় “Blue Economy” বিশেষভাবে স্থান করে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ এবং সকল ধরণের শক্রর আক্রমণ থেকে সমুদ্রসীমা সুরক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আধুনিকীকরণ তথা ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র হতে সংগ্রহকৃত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ সমুদ্রজয়, সমুদ্র অভিযান, গণচীন হতে নতুন অত্যাধুনিক ২টি করভেটসহ ১৮টি যুদ্ধজাহাজ, দুইটি হেলিকপ্টার এবং দুইটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে দুঃসাহসিক ও দক্ষ নৌ কমান্ডো দল। তৈরী করা হয়েছে নতুন নতুন নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা। এছাড়াও নৌবাহিনীকে আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে এই বছরই সংযোজিত হতে যাচ্ছে দুটি সাবমেরিন।  সেলক্ষ্যে স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া নৌবাহিনীর দক্ষ পরিচালনায় খুলনা শিপইয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইতিমধ্যে ৫টি পেট্রোল ক্রাফট, ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি এবং ২টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাংক নির্মাণ করেছে, যা যুদ্ধ জাহাজ নির্মানের ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক। এর ফলে জাহাজ নির্মানের পরনির্ভরশীলতা কমানোর মাধ্যমে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন নৌবাহিনীর উপর আস্থার কারনেই বর্তমান সরকার নৌবাহিনীর হাতে চিটাগাং ড্রাই ডক পরিচালনার ভার তুলে দিয়েছে। নৌবাহিনী তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে খুব শীঘ্রই বৃহৎ আকৃতির যুদ্ধ জাহাজসহ বাণিজ্যিক জাহাজ নির্মাণ করে দেশের এ শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।

President parade at BNA (1-6-16) (2)নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মানোন্নয়নের কথা উল্লেখ করে নৌবাহিনী প্রধান বলেন, ইতিমধ্যে নবীন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সময়কাল তিন বছরে উন্নীত করাসহ বিএসসি অনার্স এবং বিবিএ ডিগ্রি প্রদানের বিষয়টি কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়াও বিশাল সমুদ্রসীমার সার্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে মেরিটাইম বিশেষজ্ঞ তৈরীসহ নৌ সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ¡বিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি নবীন কর্মকর্তাদের সশস্ত্র বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে শৃঙ্খলাবোধকে জীবনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্থান দিয়ে বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, প্রতিভা ও চৌকস নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশসেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

গ্রীষ¥কালীন এ রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে নৌ সদর দপ্তরের পিএসওগণ, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের সকল নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেনা ও বিমান বাহিনীর উধর্¡তন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, দেশী-বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নৌকমান্ডো এবং শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের কর্মকর্তাদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্ট