Home » বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ কমান্ডো লেঃ (অব:) গাজী রহমত উল্ল্যাহ বীর প্রতীক এর ইন্তেকাল

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ কমান্ডো লেঃ (অব:) গাজী রহমত উল্ল্যাহ বীর প্রতীক এর ইন্তেকাল

Author: আইএসপিআর

খুলনা, ১১ আগস্ট ২০১৬:- বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ কমান্ডো লেঃ (অব:) গাজী রহমত উল্ল্যাহ (দাদু) বিএন, বীর প্রতীক বুধবার (১০-০৮-২০১৬) তাঁর খুলনাস্থ নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি….. রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কমডোর কমান্ডিং খুলনা কমডোর সামসুল আলম, মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। জানাজায় নৌবাহিনী কর্মকর্তাগণ ও সর্বস্তরের নাবিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে মরহুমকে তাঁর গ্রামের বাড়ীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

মরহুম লেঃ গাজী রহমত উল্ল্যাহ দাদু ১৯৩৭ সালের ১১ নভেম্বর পাইকগাছার গড়ইখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদান করেন। পাকিস্তান নৌবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাংলাদেশের গণহত্যায় উদ্বিগ্ন হয়ে যে ৮জন বাঙ্গালী সাবমেরিনার ফ্রান্স থেকে পালিয়ে আসেন মুক্তিযোদ্ধা গাজী রহমত উল্ল্যাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে তার কৃতিত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জল অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ গাজী মোহাম্মদ রহমত উল্ল্যাহসহ আরও ৭জন বাঙ্গালী সাবমেরিনার ৫০০ যুবককে সাথে নিয়ে নৌ-কমান্ডো গঠন করেন। পরবর্তীতে তাঁদের নেতৃত্বে ১৫ই আগস্ট নৌ-কমান্ডোরা চালনা (মংলা), চিটাগাং, নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর, দাইদকান্দিতে প্রথম অপারেশন পরিচালনা করেন যা “অপারেশন জ্যাকপট” হিসেবে বহুল পরিচিত। এতে হানাদার বাহিনীর অস্ত্র ও রসদ বহনকারী প্রায় ৩২টি জাহাজ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছিল। ফলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৌ ও সামুদ্রিক পথে সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং বাংলাদেশে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। গেরিলা যুদ্ধে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট অঞ্চলে নৌ কমান্ডোদের আনুমানিক চার হাজারেরও অধিক যোদ্ধা ছিল। তার নেতৃত্বে কপিলমুনি যুদ্ধে ১৫৬ জন রাজাকার নিহত হয়। এছাড়া তিনি গড়ইখালি, নীল কলম, চালনা, লক্ষীখোলা, পাইকগাছা, চাপড়া, আশাশুনি, শিয়ালডাঙ্গা, কপিলমুনি ও খুলনা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ১৭ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের প্রথম প্রভাতে স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা তিনিই প্রথম খুলনার সার্কিট হাউজের উপরে উত্তোলন করেন। জাতির জনকের প্রত্যাবর্তনের দিন তিনি ঢাকা বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধুকে নৌ কন্টিনজেন্টের গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

লেঃ (অব:) গাজী মোহাম্মদ রহমত উল্ল্যাহ ইংল্যান্ডের Manadon Engineering কলেজ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত সমাজকর্মী এবং অতি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বরিশাল ও রাজশাহীসহ নৌবাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটিতে মসজিদ, স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট